গীতাপাঠের বিধি

শুদ্ধভাবে স্থিরচিত্তে আসনে বসিয়া গন্ধপুষ্পাদি দ্বারা গীতাশাস্ত্রের পূজা করিবে। চণ্ডীগ্রন্থ-পূজার ন্যায় গীতাগ্রন্থও পূজা করিতে হয়। পরে নিম্নলিখিতভাবে যথাক্রমে করন্যাস ও অঙ্গন্যাস করিবে।

শ্রীহয়গ্রীবায় নমঃ
শুক্লাম্বরধরং বিষ্ণুং শশিবর্ণং চতুর্ভুজম্।
প্রসন্নবদনং ধ্যায়েৎ সর্ববিঘেœাপশান্তয়ে।।
নারায়ণং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্।
দেবীং সরস্বতীং চৈব ততো জয়মুদীরয়েৎ।।
ব্যাসং বশিষ্ঠনপ্তারং শক্ত্রেঃ পৌত্রমকল্মষম্।
পরাশরাত্মজং বন্দে শুকতাতং তপোনিধিম্।।
ব্যাসায় বিষ্ণুরূপায় ব্যাসরূপায় বিষ্ণবে।
নমো বৈ ব্রহ্মবিধয়ে বশিষ্ঠায় নমো নমঃ।।
অচতুর্বদনো ব্রহ্মা দ্বিবাহুরপরো হরিঃ।
অভাললোচনঃ শম্বুর্ভগবান্ বাদরায়ণিঃ।।

 

ওঁ অস্য (এই) শ্রীমদ্ভগবদগীতা-মালা-মন্ত্রস্য (শ্রীমদ্ভগবদগীতারূপ মন্ত্রমালার) শ্রীভগবান্ বেদব্যাসঃ ঋষিঃ (ঋষি ভগবান্ বেদব্যাস) অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ (ছন্দ অনুষ্টুপ) শ্রীকৃষ্ণঃ পরমাত্মা দেবতা (দেবতা- পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ) “অশোচ্যান্ অন্বশোচস্ত¡ং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে” (২।১১ শ্লোকের প্রথমার্ধ) ইতি বীজম্ (এই মন্ত্র গীতার বীজ)। “সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ” (১৮।৬৬ শ্লোকের প্রথমার্ধ) ইতি শক্তিঃ (এই মন্ত্র গীতার শক্তি)। “অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ” (১৮।৬৩ শ্লোকের শেষার্ধ) ইতি কীলকম্ (এই মন্ত্র গীতার কীলক)।

করন্যাস- “নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ” (২।২৩ শ্লোকের প্রথমার্ধ) ইতি (এই মন্ত্রে) অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ (উভয় তর্জনীর দ্বারা সেই সেই হস্তের অঙ্গুষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করিবে)। “ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ” (২।২৩ শ্লোকের দ্বিতীয়ার্ধ) ইতি (এই মন্ত্রে) তর্জনীভ্যাং স্বাহা (দুই অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা সেই সেই হস্তের তর্জনীদ্বয় স্পর্শ করিবে)। “অচ্ছেদ্যোহয়ম্ অদ্যাহ্যোহয়ম্ অক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ” (২।২৪ শ্লোকের প্রথমার্ধ) ইতি (এই মন্ত্রে) মধ্যমাভ্যাং বষট্ (বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বারা সেই সেই হস্তের মধ্যমাঙ্গুলি স্পর্শ করিবে)। “নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুরচলোহয়ং সনাতনঃ” (২।২৪ শ্লোকের শেষার্ধ) ইতি (এই মন্ত্রে) অনামিকাভ্যাং হুম্ (বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বারা স্ব স্ব জাতীয় অনামিকা স্পর্শ করিব)। “পশ্য মে পার্থ রূপাণি শতশোহথ সহস্রশঃ” (১১।৫ শ্লোকের প্রথমার্ধ) ইতি (এই মন্ত্রে) কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্ (দুই বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বারা সেই সেই হস্তের কনিষ্ঠাঙ্গুলিদ্বয় স্পর্শ করিবে)। “নানাবিধানি দিব্যানি নানাবর্ণাকৃতীনি চ” (১১।৫ শ্লোকের শেষার্ধ) ইতি করতলপৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায় ফট্ (এই মন্ত্র পাঠপূর্বক দক্ষিণ করতল দ্বারা বাম করতল বেষ্টনপূর্বক বাম করতলের উপর দক্ষিণ করতল দ্বারা আঘাত করিবে) ইতি করন্যাসঃ।

অঙ্গন্যাস- “নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ” ইতি হৃদয়ায় নমঃ (এই মন্ত্র পাঠ করিয়া দক্ষিণহস্তের তর্জন্যাদি অঙ্গুল্যগ্রত্রয় দ্বারা হৃদয় [বক্ষ] স্পর্শ করিবে)। “ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ” ইতি শিরসে স্বাহা (এই মন্ত্রে দক্ষিণ তর্জনী-মধ্যমাগ্র দ্বারা শিরোদেশ স্পর্শ করিবে)। “অচ্ছেদ্যোহয়ম্ অদ্যাহ্যোহয়ম্ অক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ” ইতি শিখায়ৈ বষট্ (এই মন্ত্রে অঙ্গুষ্ঠাগ্র দ্বারা শিখা স্পর্শ করিবে)। “নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুরচলো*য়ং সনাতনঃ” ইতি কবচায় হুম্ (এই মন্ত্র পাঠ করিয়া যথাক্রমে দক্ষিণ করাঙ্গুলিসমূহ দ্বারা বাম বাহুমূল ও বাম করাঙ্গুলিসমূহ দ্বারা দক্ষিণ বাহুমূল স্পর্শ করিবে)। “পশ্য মে পার্থ রূপাণি শতশোহথ সহস্রশঃ” ইতি নেত্রত্রয়ায় বৌষট্ (এই মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক দক্ষিণ হস্তের তর্জনী মধ্যমা ও অনামিকা দ্বারা বাম ও দক্ষিণ নেত্র এবং নাসামূল স্পর্শ করিবে)। “নানাবিধানি দিব্যানি নানাবর্ণাকৃতীনি চ” ইতি করতলপৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায় ফট্ (এই মন্ত্র পাঠপূর্বক দক্ষিণ হস্তের তর্জনী ও মধ্যমাঙ্গুলি দ্বারা বাম করতল বেষ্টনপূর্বক বামকরতলে আঘাত করিবে)। ইতি অঙ্গন্যাসঃ।

“শ্রীকৃষ্ণপ্রীত্যর্থং পাঠে বিনিযোগঃ” (ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রীতির নিমিত্ত গীতাপাঠ করিতেছি-এইরূপ সঙ্কল্প করিবে)। সঙ্কল্পান্তে গীতার ধ্যান পাঠ করিবে। ভগবানকে স্মরণ ও প্রণাম করিয়া গীতার মর্মার্থ হৃদয়ে প্রকাশ করিবার জন্য আন্তরিক প্রার্থনাপূর্বক গীতাপাঠ আরম্ভ করিতে হয়। গীতাপাঠান্তে গীতামাহাত্ম্য পাঠ করিবে।

আংশিক হইলেও গীতার নিত্যপাঠ একান্ত শ্রেয়স্কর। গীতায় সর্বশাস্ত্রের সার নিহিত আছে। “গীতা সুগীতা কর্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্রবিস্তরৈঃ।” অর্থাৎ গীতাধ্যয়নই প্রধান কর্তব্য; বহু শাস্ত্রপাঠের কি প্রয়োজন? ভগবান অর্জুনকে বলিয়াছিলেন, ‘গীতা মে হৃদয়ং পার্থ’- হে পার্থ, গীতাই আমার হৃদয়। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং গীতার শেষে বলিয়াছেন যে, গীতাপাঠক তাঁহার প্রিয়জন; গীতাপাঠ দ্বারা পরাভক্তি লাভ হয়; গীতাপাঠ উৎকৃষ্ট জ্ঞানযজ্ঞে শ্রীকৃষ্ণ পূজিত ও প্রীত হন। সুতরাং গীতার নিত্যপাঠ একান্ত আবশ্যক।

 

হরি ওঁ।